রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি : হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জি কে গউছ বলেছেন, ‘আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আমার কোনো শত্রু নেই। আগামী ২-৪ দিনের মধ্যে আমি খুন হতে পারি। এ জন্য সম্পূর্ণভাবে সদরের এমপি আবু জাহির দায়ী থাকবেন। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আমাকে গালাগালি করছেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন, প্রকাশ্যে ভোট দেয়ার জন্য মানুষকে হুমকি দিচ্ছেন। আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে।’
মঙ্গলবার দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জি কে গউছ এ কথাগুলো বলেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ প্রটোকল নিয়ে এমপি নির্বাচনী মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সরকারি তেল পুড়িয়ে পুলিশ নিয়ে ভোট চাচ্ছেন। একটি গণতান্ত্রিক দেশে পুলিশ প্রশাসনের কাছে এমন আচরণ মানুষ প্রত্যাশা করছে না। এতে প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।
জি কে গউছ বলেন, হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। প্রশাসন তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলেছে। তারা নৌকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করছে। ধানের শীষের কর্মী সমর্থকদের বাসা বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করছে। ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এ পর্যন্ত ১৩৪ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে যতই হামলা মামলা করা হোক জনগণ আমার সাথে আছে, আমি ভোটের মাঠ থেকে সরে যাব না।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ‘কোনো রাজনৈতিক মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় বিশ্বাস করে বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু হবিগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা উপেক্ষা করে নির্বিচারে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। এতে প্রমাণ হচ্ছে, হয় প্রধানমন্ত্রীর কথা সঠিক নয়, না হয় হবিগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর কথা শোনছেন না। এতে মানুষ হতাশ হয়েছে, রাষ্ট্রের একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতি এ রকম প্রতিশ্রুতি প্রত্যাশা করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু সোমবার রাতে পাইকপাড়ায় পুলিশের বর্বর হামলা দেখেছি। আমার ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এমন ঘটনার মুখোমুখি হইনি। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সেই দিন নুরপুর ইউনিয়নে গণসংযোগ শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম। বাইপাস রাস্তার পাইকপাড়ায় আসা মাত্রই অন্ধকারের মধ্যে কয়েকশ পুলিশ আমাদের গাড়ি বহরে হামলা করে। তারা বেধড়ক পিঠাতে থাকে আমার দলীয় নেতাকর্মীদের। আমার গাড়ি থেকে টানা হেঁচড়া করে জেলা যুবদলের সভাপতি মিয়া মো. ইলিয়াছ, সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদ, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রুবেল চৌধুরী ও যুবদল নেতা নজরুল ইসলামকে ধরে নিয়ে যায়। অন্যান্য গাড়ি থেকে ১৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। অনেকগুলো মোটরসাইকেল ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে।’
কেন আমার কর্মী সমর্থকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন ‘চুপ থাকেন, কোনো কথা বলবেন না, মোবাইল বাজাবেন না, চিৎকার করলে গুলি করে দেব, জীবন বাঁচাতে চাইলে নির্বাচন থেকে সরে যান, কে বলেছে আপনাকে নির্বাচন করতে, আপনি নির্বাচন করার কারণে আমরা রাতের বেলায় ঘুমাতে পারি না, উপরের নির্দেশে আমরা রাত দিন আপনার কর্মীদের ধরতে ব্যস্ত থাকতে হয়।’
একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে এমন কথা শোনে আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি। আমি সাথে সাথে জেলা রিটার্নিং অফিসার ও হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসককে একাধিকবার ফোন করেছি। কিন্তু তিরি আমার ফোন রিসিভ করেননি, জানান গউছ।
তিনি বলেন, গত শনিবার শায়েস্তাগঞ্জে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার নির্বাচনী প্রচারণায় শায়েস্তাগঞ্জের মেয়র ছালেকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের লোকজন আমার উপর হামলা করেছে। আমার অনেক কর্মী আহত হয়েছে। আমার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে আমাকে উদ্ধার করেছেন। অথচ এই ঘটনায় আমাদের শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এমন কঠিন অবস্থায় আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
জি কে গউছ বলেন, হবিগঞ্জের প্রত্যেকটি এলাকায় ধানের শীষের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় গেলে মানুষের চোখেমুখে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অনাস্থার চিত্র দেখা যায়। জনগণ আমাদেরকে ভোটে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন, আমাদের সাহস যোগাচ্ছেন। তাই যতই বাধা আসুক ভোট যুদ্ধে থাকবো। নিরপেক্ষ ভোট হলে নৌকার চেয়ে ১ লাখ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হবো, ইনশাআল্লাহ।
তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, ধানের শীষকে বিজয়ী করুন, অন্যথায় স্থায়ীভাবে দেশের গণতন্ত্র হারিয়ে যাবে। আবারও বাকশাল কায়েম হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও মহিলাদলসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।